ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫, এপ্রিল ২০২৫ ৬:২২:১৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
উৎসবের আমেজে শেষ হলো ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ ১৪ ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেলরুট সচল জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো বটমূলের বর্ষবরণ বর্ষবরণে ঢাবি এলাকায় উৎসবের ঢেউ, বর্ণিল শোভাযাত্রা শুরু রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু আজ পহেলা বৈশাখ, স্বাগত ১৪৩২

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমার সাতকাহণ

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৩ পিএম, ৮ মার্চ ২০২১ সোমবার

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন।

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন।

একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে দেশের মুক্তির জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন টাঙ্গাইলের ফাতেমা খাতুন৷ অথচ দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি৷ আর আজ রোগে-শোকে ভুগছেন স্থানীয় পৌরসভার ঝাড়ুদার এই বীর মুক্তিযোদ্ধা৷

মুক্তযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের কোল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়া শুরু করলো৷ তখন আমি খুব সাহসী ছিলাম৷ কোনো কিছুকেই ভয় পেতাম না৷ একদিন মুক্তিযোদ্ধারা বললেন, তোমার মতো একজন সাহসী মেয়ে আমাদের দরকার৷ যাকে মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিতে থাকতে হবে, রান্না করা এবং তথ্য ও চিঠিপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করতে হবে৷’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন ছেলেদের মতো চুল কেটে রাখতাম৷ নাক-কান না ফোঁড়ার কারণে আমাকে পুরোপুরি ছেলেদের মতো মনে হতো৷ ফলে আমি সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গেলাম৷’

ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমি কাজ করা শুরু করলাম। মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য বহেড়াতৈল ক্যাম্প থেকে সখীপুরের কোকিলা পাবর, গোহাইল বাড়ি, রতনগঞ্জ ও মরিচাসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাতেন৷ এছাড়া বহেরাতৈল মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে অস্ত্র পাহারা দেওয়া এবং যত্ন নেওয়ার কাজ করতাম৷ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্রাম থেকে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে আনতাম৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা-চাচিদের দিয়ে মরিচ, হলুদ এবং অন্যান্য মসলা বেটে নিয়ে যেতাম৷'

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বহেরাতৈল গ্রামের সিরাজ উদ্দিন ও লাল জানের মেয়ে ফাতেমা। ১৯৭১ সালে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি বহেরাতৈলে কর্মরত ছিলেন৷ ফাতেমা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যেতে চাইলে অল্প বয়সি বলে তাকে যুদ্ধে নিয়ে যাননি মুক্তিযোদ্ধারা৷ বরং ঘাঁটি পাহারা দেওয়া এবং অন্যান্য কাজের জন্যই তাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল বলে জানান ফাতেমা৷

একদিন নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কীভাবে কয়েকজন রাজাকারকে ফাঁদে ফেলেন তিনি, সে ঘটনা জানালেন ফাতেমা খাতুন৷

তিনি বলেন, ‘একদিন মরিচার দিক থেকে কয়েকজন রাজাকার রাইফেলকে চার ভাঁজ করে কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে আসছে৷ আর আমি মরিচার দিকে যাচ্ছিলাম৷ এসময় তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, এই তুমি ছেলে না মেয়ে? আমি বলি, ছেলে৷ তখন তারা বলে, তোমাকে তো মেয়ের মতো মনে হয়৷ তুমি কোথায় যাও? আমি তখন বলি, বোনের বাড়িতে যাবো৷ তখন তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, বহেরাতৈলে কি মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি আছে৷ আমি বলি, না, না এদিকে তাদের কোনো ঘাঁটি নাই৷ সোজা চলে যান৷ তারা আমার দেখানো পথ ধরে চলে যায়৷ সামনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পড়ে৷ সেখানে তাদের ধরে বেদম মেরে ফেলে রেখেছিল মুক্তিযোদ্ধারা৷'

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন ১৩ বছর ধরে সখীপুর পৌরসভার ঝাড়ূদার৷ দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি ফাতেমা খাতুন৷ এছাড়া ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে ফাতেমার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা কেউ জানতো না৷ ২০০৭ সালে পত্রিকায় ফাতেমা খাতুনের বীরত্বের কাহিনী তুলে ধরার পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার প্রতি সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়৷ এখনও তাকে কিছু সহযোগিতা করেছে সরকার৷

বর্তমানে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও সখীপুর পৌরসভায় মাস্টাররোলে ঝাড়ুদারের কাজ করে দুই হাজার টাকা বেতন পান এই বীর নারী৷ অভাব-অনটনে থাকা ফাতেমা বর্তমানে নানা রোগে ভুগছেন৷ টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না৷

পাঁচ সন্তানের জননী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমার স্বামী মোবারক হোসেন একজন মানসিক রোগী৷ তার কোনো আয় নেই। ফাতেমার উপার্জনেই চলছে পরিবার৷ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷