সমুদ্র ও সাত মানবী
শান্তা মারিয়া | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১২:২৪ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার
উপন্যাস : সমুদ্র ও সাত মানবী শান্তা মারিয়া (ষষ্ঠ পর্ব)
।ষষ্ঠ পর্ব।
নিজের ঘরে বসেও সুহার্সো ও কঙ্কনার কথা ভাবছিলেন আলফাজ। গত তিনদিনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করছিলেন তিনি। বান্দরবান, ডুলাহাজরা আর বৌদ্ধমন্দির দেখতে গিয়ে যা ঘটলো তা ভালো হয়নি। বিশেষ করে বৌদ্ধমন্দিরের সিঁড়ি দিয়ে সুহার্সো যেভাবে হাতে ধরে কঙ্কনাকে উঠতে সাহায্য করছিলেন, এমনকি যখন সাহয্যের দরকার নেই, তখনও যেভাবে হাত ধরে রাখছিলেন তা রীতিমতো দৃষ্টিকটু। সুহার্সো না হয় বিদেশি, মহিলাই বা এমন কেন। ঢাকা থেকে বাইরে এসেছে বলে কি মনে করছেন তিনি বাঙালি সমাজের বাইরে চলে এসেছেন। ছি ছি। আরও তো অন্য মহিলারা এখানে আছেন। তারা যদি ঢাকায় গিয়ে রটান যে এই এনজিওর ট্যুরে বেলেল্লাপনা হয়েছে তখন? এমনিতেই সামিরাকে নিয়ে যন্ত্রণায় পড়েছেন তিনি। বিরক্তির একশেষ করছেন ওই নির্বোধ মহিলা। আজকের ডিনারেও মদ খেয়ে মাতলামি করেছেন সামিরা। আলফাজ ডিনারে হার্ডড্রিংকস রাখতে চাননি। কারণ বাংলাদেশের নারীরা প্রকাশ্যে মদ খান না বলেই তার ধারণা। যখন পুরুষ সাংবাদিকদের নিয়ে এর আগে ট্যুরে এসেছেন তখন অবশ্য মদের ফোয়ারা ছুটাতে হয়েছে। এক রকম নয়, বিভিন্ন রকম দামী পানীয়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। বিনে পয়সায় পেলে সাংবাদিকরা মদও গিলতে পারে। দুয়েকজন আবার শুধু মদেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, আদিম আনন্দেরও খোঁজ জানতে চায়। কিন্তু এ ব্যাপারে আলফাজ খুব কঠোর। পিআরও হয়েছেন বলে কি এত নিচে নামতে হবে নাকি। না বোঝার ভান করে হাসিমুখে এড়িয়ে যান ওইসব লোকদের। আজকে মূলত নারী সাংবাদিকদের এই ডিনারে হার্ড ড্রিংকস রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না আলফাজ। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠান মাল্টিন্যাশনাল তাছাড়া এখানকার প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের ব্যক্তিগত উৎসাহও ছিল।
সামিরা ছাড়া মেয়েদের মধ্যে আর কেউই মদ ছোঁয়নি। সামিরাই পেগের পর পেগ সাবার করে নাচের সময় খালি আলফাজের গায়ে এসে পড়ছিলেন। চরম বিরক্ত হলেও আলফাজ হাসিমুখে মহিলাকে সংযত করে রাখার চেষ্টা করছিলেন। বৌদ্ধমন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ও সামিরা আলফাজের গায়ে গা ঘেঁষে হাঁটছিলেন। চাচ্ছিলেন সুহার্সোর মতো আলফাজও ওকে হাত ধরে উঠাক। আলফাজ সে ইংগিত না বোঝার ভান করে সুবর্ণা, নাহিদ ও শোভার দিকে মনোযোগ দিচ্ছিলেন। আশ্চর্য ভালো লাগছিল ওর শোভাকে। কৃশকায়া, কিছুটা বয়সও হয়েছে কিন্তু এখনও যথেষ্ট সুন্দরী। বিশেষ করে হাসিটা সত্যিই সুন্দর। উর্মিকেও ভালো লাগছিল তার। কেমন যেন বিষন্ন ও চুপচাপ। যেন সর্বদা ডুবে আছে নিজের গভীরে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকের তুলনায় উর্মি আশ্চর্যরকম অহংকারহীন। ওর এদিকটাই ভালো লাগছিল আলফাজের। সাধারণত টিভি চ্যানেলের যেসব সাংবাদিক আগে এই ট্যুরে এসেছেন তাদের হাঁকডাকে আলফাজকে অস্থির হতে হয়েছে। কিন্তু উর্মি যথেষ্ট নামকরা হলেও সেরকম কোন বহির্প্রকাশ তার মধ্যে নেই। টিভি সাংবাদিকরা সাধারণত সঙ্গে একজন ক্যামেরা পারসন নিয়ে আসেন। সেই ফটো সাংবাদিকের ভাবভঙ্গি থাকে আরও বেশি। উর্মি কিন্তু একাই এসেছেন। নিজের হাতেই ভিডিও ফুটেজ নিচ্ছেন। দেখে খুব বেশি শক্তসমর্থ বলে মনে হয় না তাকে। অথচ কি দৃঢ় হাতে ভিডিও ক্যামেরাটি ধরে আছেন।
জলি আপার দিকেও মনোযোগ দিতে হচ্ছিল আলফাজকে। শুধু মনোযোগ নয়, সবিশেষ মনোযোগ। জলি আপাই তো নারী সাংবাদিকদের এই দলটির প্রধান। এর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে পারলে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আরও প্রচার পাওয়া যাবে। মহিলার মধ্যে অবশ্য কেমন যেন এক ধরনের আত্মম্ভরিতা রয়েছে। কথাবার্তার মধ্যেও কেমন একটা মাতব্বরি চাল। আলফাজকে যে সুরে তুমি তুমি করে বলছেন সেটাও ভালো লাগছে না। যেন উনি তার বস আর কি। তবে পিআরওকে এসব গায়ে মাখতে হয় না। গায়ে না মাখার জন্যই তো প্রতিষ্ঠান তাকে প্রতিমাসে এতগুলো টাকা দেয়। এই সব সাংবাদিকের চেয়ে তার বেতন অনেক বেশি।
কঙ্কনার সৌন্দর্য সতেজতা এসব ভালো লাগলেও সুহার্সোর সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা একেবারেই ভালো লাগছে না আলফাজের। একদিকে নিশ্চিন্ত যে কাল রাতেই এরা সব ঢাকায় ফিরে যাবেন। কাল রাতের বাসে এদের উঠিয়ে নিরাপদে ঢাকায় পৌছে দিতে পারলে তবে শান্তি পাবেন আলফাজ। ট্যুরের ছবি তোলার জন্য যে ছেলেটিকে নিয়ে এসেছেন তার আক্কেল জ্ঞান দেখেওে বিরক্ত লাগছে। সামিরা যখন তার গায়ে ঢলে পড়তে চাইছে সে সময়ও বেশ কিছু ছবি নিয়েছে ছোকরা, দেখেছেন আলফাজ। ভাগ্য ভালো ডিজিটাল ক্যামেরা। ঢাকায় পৌছানোর আগেই আপত্তিকর ছবিগুলো ডিলিট করতে হবে। এখনি সাবধানও করতে হবে যেন ছবিটবি দলের কারও সঙ্গে শেয়ার না করে। ইতোমধ্যেই কয়েকজন ফেসবুকে ট্যুরের ছবি শেয়ার করেছে, দেখেছেন তিনি। অবশ্য তার মধ্যে আলফাজের ছবি নেই, একটা গ্রুপ ছবি ছাড়া। যে যার নিজের চেহারা হাইলাইট করতেই ব্যস্ত। তবে সামিরা তার সঙ্গে মোবাইলে কয়েকটি ছবি তুলেছে। সেখানে আলফাজ যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়েছেন। এমনিতেই আলফাজের স্ত্রীর ইদানিং একটু সন্দেহবাতিক দেখা দিয়েছে। এসব ছবি দেখলে আর রক্ষা নেই। কুরুক্ষেত্র বেঁধে যাবে। আলফাজ তার স্ত্রীকে কিছুতেই বোঝাতে পারেন না যে, সারাক্ষণ হাসিমুখে থাকতে হয় বলে আসলে মনে মনে পুরো দুনিয়ার উপরেই তিনি বিরক্ত। পিআরও হওয়া আর ইলেকশনে দাঁড়ানো একই কথা। কাউকে চটানোর উপায় নেই। হয়তো সেজন্যই নিজের উপর সারাক্ষণ চটে আছেন তিনি। কাল সকালে সমুদ্রস্নান আর বিকালে বার্মিজ মার্কেটের প্রোগ্রামটা ভালোয় ভালোয় চুকলে হয়।
রোদ ঝলমল সমুদ্র সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে স্বাগত জানালো অতিথি মানবীদের। এই বর্ষায় যে এমন উজ্জ্বল রোদ উঠবে তা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতই ছিল। অবশ্য একটু একটু মেঘ এখনও খেলা করছে আকাশের নানা প্রান্তে। কিন্তু তা বর্ষার কালো মেঘ নয়, শরতের সাদা নির্মল রূপের প্রতিনিধি। মনে হয় ভুল করে শরত্ বুঝি এসে গেছে আজকের দিনটিতে। এই মেঘ ছায়া দেবে কিন্তু হঠাত্ বর্ষণের সংকেত নিয়ে আসবে না।
এই উচ্ছ্বল সমুদ্র যখন স্পর্শ করলো শোভা সেনকে তার কেমন যেন লজ্জা লাগলো। কুমারীর দীর্ঘ ঘুম ভেঙে ওঠা। সমুদ্র তাকে জড়িয়ে ধরছে, আদরে আপ্লুত করে দিচ্ছে, সত্যিই যেন দেবতা বরুণের স্পর্শ। শোভা হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করলেন সমুদ্রকে। নিঃসঙ্গতার জন্য তার আর কোনো আক্ষেপ বোধ হচ্ছিল না। জীবনে সঙ্গী অনিবার্য নয়। তাছাড়া একজন পুরুষকে সঙ্গী হিসেবে পেতেই হবে, তাই বা কেন। কে বলে শোভার জীবন নিঃসঙ্গ, অসম্পূর্ণ। পেশাগত জীবন রয়েছে, রয়েছে বন্ধুবান্ধব, রয়েছে প্রকৃতি। সিনেমা দেখে, বই পড়ে, গান শুনে, বেড়িয়ে ইচ্ছামতো জীবনকে উপভোগ করতে পারেন তিনি। শোভার বিয়ে করা না করা নিয়ে এরপর কেউ উটকো মন্তব্য করতে এলে দুকথা বেশ করে শুনিয়ে দেবেন তিনি। একলা স্বাধীন জীবনে যথেষ্ট ভালো আছেন, অন্য অনেকের চেয়ে অনেক ভালো। বিয়ে জীবনের বৃত্তে একটা ঘটনা মাত্র। এই ঘটনাটিকে বাদ দিয়েও সুখী হওয়া যায় বৈকি। শোভার অন্তত নিজেকে বেশ সুখী বোধ হলো।
সুবর্ণা ভয় পাচ্ছিলেন সমুদ্রে নামতে। সাঁতার জানেন না এই অজুহাতে নাহিদকে বার বার বলছিলেন তিনি নামবেন না। নাহিদের জোরাজুরিতে নেমে বুঝলেন না নামলে কি ভুলটাই করতেন। এই বিশাল সমুদ্রের স্পর্শে তার ভিতরের সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব কেটে যাচ্ছিল। তিনি পায়ের নিচে বালির সরে যাওয়া টের পাচ্ছিলেন। একই সঙ্গে অনুভব করছিলেন নিজের পদক্ষেপের দৃঢ়তা। নাহিদের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তিনি একাই হাঁটুজলে নেমে দাঁড়ালেন। নাহিদ অবাক হয়ে দেখছিলেন সুবর্ণা ভয় পাচ্ছেন না। ঢেউয়ের ঝাপটায় তিনি হাসছেন অন্যরকম সাবলীল হাসি।
নাহিদের নিজের ভিতর থেকেও বন্ধ জানালাগুলো খুলে যাওয়ার শব্দ টের পাচ্ছিলেন। সমুদ্রের সংস্পর্শে এসে তার ভালো লাগলো কঙ্কনাকে, সুহার্সোকে, সামিরাকে, এমনকি নিজেকেও। নিজেকে নিজের কাছে মনে হলো সুন্দর, সতেজ। সমুদ্রের জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যায় না। কিন্তু তিনি নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলেন আকাশ ও সমুদ্রের মাঝখানে পৃথ্বিকন্যার আলোয়। তিনি বাংলার মাটির সন্তান পললমানবী।
চলবে...
- লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত, যেমন থাকবে আবহাওয়া
- ২০ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলো মেটা
- সর্দি-জ্বরে বেহাল দশা? স্বস্তি মিলবে ঘরোয়া উপায়ে
- পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১৩ ডিগ্রিতে
- শীতে ত্বক ভালো রাখবেন যেভাবে
- ‘সাগরের তীর থেকে’ খ্যাত গানের শিল্পী জীনাত রেহানা হাসপাতালে
- ব্রাজিলে বাস খাদে পড়ে ২৩ জনের প্রাণহানী
- বগুড়ায় আগাম জাতের আলু চাষ
- ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ
- হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর ঢুকতে পারবে না
- ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা, ঢাকা কলেজের সব ক্লাস বন্ধ
- স্কলাসটিকায় ঠাকুর’মার ঝুলির নাটক মঞ্চস্থ
- পাবনায় শিমের ভালো ফলনে কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
- পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দ
- জেনে নিন বিমানবন্দর নেই যে সব দেশে
- ঘুরে আসুন পানামসহ না.গঞ্জের পাঁচটি পর্যটন স্পট
- আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু
- বিশ্ব হার্ট দিবস আজ
- হেমন্তে ছাতিম ফুল সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়
- শান্তিতে নোবেল পেল জাপানের মানবাধিকার সংস্থা নিহন হিদানকিও
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন আজ
- ‘রিমান্ড’-এ মম
- রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, যা জানা গেলে
- পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল ভারতের মেয়েরা
- সৈয়দ শামসুল হকের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
- নেপালে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১১২
- জীবনে প্রেম এসেছে ৬ বার: স্বস্তিকা
- পঞ্চগড় থেকে দেখে আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা
- গৃহশ্রমিক মেয়েদের দিন কষ্টে কাটে