ঢাকা, বুধবার ০১, জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩২:৪৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
চলতি মাসেই দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা, তারা শ্রমিক না: প্রধান উপদেষ্টা নতুন বছর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে আজ আজ থেকে সারা দেশে ৩ দিন গ্যাস সরবরাহ কম থাকবে জ্বলন্ত ফানুস পড়ে মিরপুর ও ধানমন্ডিতে আগুন রাজধানীতে আতশবাজি-পটকায় নতুন বছর উদযাপন

সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল, বিবিসির প্রতিবেদন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:২১ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশে প্রশাসনের প্রধান কেন্দ্র সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকদের জন্য ইস্যু করা সব অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এক নোটিশে বাতিল ঘোষণা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ের পর সরকার বলছে কোনো ইভেন্ট কাভার করতে সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে 'অস্থায়ী অ্যাক্সেস কার্ড' পাবেন।

আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের এ সিদ্ধান্ত 'সাময়িক' এবং দ্রুতই এ ব্যাপারে 'ইতিবাচক' সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এর আগে শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়ে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন সাংবাদিকদের অনেকেই। আবার কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তকে সঠিক উল্লেখ করে যাচাই বাছাই করে নতুন করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলছেন সাংবাদিকদের সব কার্ড একসাথে বাতিলের ঘটনার মধ্য দিয়ে জনগণ ও গণমাধ্যম ভুল বার্তা পেয়েছে, যা অনেকের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে।

এর আগে গত মাসেই তিন দফায় ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্পাদক পরিষদ। একে 'সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতে অন্তরায়' বলে উল্লেখ করেছিলো সংগঠনটি।

এদিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের খবরাখবর নিয়মিত সংগ্রহ করতে সচিবালয়ে যেতে হয় এমন সাংবাদিকদের সংগঠন- বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক জানিয়েছেন রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে তারা সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাজ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেই দাবি জানাবেন তারা।

বিজ্ঞপ্তিতে কী বলা হয়েছে

শুক্রবার জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাশ (ডিজিটাল অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম) এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাশ ব্যতীত সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো।"

এতে আরও বলা হয় "সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দ্বারা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এতদ্বারা বাতিল করা হলো।"

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে বাতিল করা বিভিন্ন ক্যাটাগরির সচিবালয় প্রবেশ পাশধারীরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ, ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ডিএমপি, ১৫ আব্দুল গণি রোড, ঢাকায় স্থাপনকৃত বিশেষ সেলের মাধ্যমে নতুন করে অস্থায়ী প্রবেশ পাশের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

"অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হলো," বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে বুধবার দিবাগত রাতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি এখন কাজ করছে।

এর মধ্যেই আগুন লাগার ঘটনার কথা উল্লেখ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে যেসব বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য অস্থায়ী পাশ আছে তাদের সাথে সব সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও বাতিল করা হলে এ নিয়ে তুমুল ক্ষোভ তেরি হয় সাংবাদিকদের মধ্যে।

যা বলছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তার প্রেস উইং জানিয়েছে, সাংবাদিকদের সাময়িক এই অসুবিধার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। যে কোনো ইভেন্টের জন্য সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত অস্থায়ী অ্যাক্সেস কার্ড পাবেন বলেও জানানো হয়েছে।

"সরকার শীঘ্রই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলো পর্যালোচনা করবে এবং নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য তথ‍্য অধিদপ্তর- পিআইডি'র মাধ্যমে সকল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে নতুন অ‍্যাক্রিডিটেশনের আবেদন আহ্বান করবে," জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায়ও একই কথা জানানো হয়েছে।

'গণমাধ্যমে ভুল বার্তা গেছে'

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলছেন সব সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড একযোগে বাতিল কোনো শুভলক্ষণ নয় এবং এর মাধ্যমে জনমনে ও গণমাধ্যমকে ভুল বার্তা দেয়া হয়েছে।

"এভাবে একযোগে সব কার্ড বাতিল করায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হতে পারে যা মুক্ত গণমাধ্যম তথা স্বাধীন মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কারণ সাংবাদিকদের মধ্যে একটি ভীতিকর অবস্থা দেখা যেতে পারে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তার মতে সব কার্ড যাচাই বাছাই করে যেসব কার্ড 'ভুল লোকের হাতে' আছে বলে প্রমাণ হতো সেগুলো বাতিল করলেই এ নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হওয়ার সুযোগ পেতো না।

"স্টেকহোল্ডার বা সচিবালয়ে যেসব সাংবাদিক কাজ করেন তাদের সাথে কথা বলে সহজেই এর সমাধান করা যেতো," বলছিলেন তিনি।

তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমকে ঘিরে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো পরম্পরা বিবেচনা করলে তা মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য ভালো বার্তা দেয় না।

"আমরা চাই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা ভীতিহীনভাবে কাজের সুযোগ পাক," বলেন মি. লিটন।

হামলা, হত্যা মামলা ও কার্ড বাতিল

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় নেয়ার পর সংবাদপত্র অফিসে হামলা, বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের এবং তিন দফায় সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকায় দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ের সামনে ও অবস্থান এবং ঢাকার বাইরে তাদের অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনায় গণমাধ্যম মালিকদের সংগঠন, সম্পাদক পরিষদ এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন উৎকণ্ঠা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন সাংবাদিকতা পরিচয়ে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কার্ড দেয়া হয়েছিল সেই সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

"অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বিগত সময়ে যথাযথভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়নি। অতিরিক্ত সংখ্যায় এটা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে। অনেক দলীয় কর্মীকে দেয়া হয়েছে এবং এই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে এসে তারা নানা ধরনের অপকর্ম করেছে এই ধরনের প্রমাণও আছে। তো সেই অনুযায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডটা কমানোর সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, তো সেটা বাতিল করা হয়েছে। সেটা আবার নবায়ন করা হবে আবার তারা পুনরায় আবেদন করলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকলে সেটা তাদেরকে আবার দেয়া হবে," বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন তিনি।