ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬, নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫৭:৩৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, বেড়েছে দাম গ্রীসে অভিবাসীদের নৌকাডুবি: ৬ শিশুর মরদেহ উদ্ধার ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাঁপছে নীলফামারী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, বন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত খালেদা জিয়াকে উমরাহ পালনের আমন্ত্রণ জানাল সৌদি আরব পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১৩ ডিগ্রিতে

সাকুরা সাকুরা

প্রবীর বিকাশ সরকার | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:০১ পিএম, ৩১ মার্চ ২০১৮ শনিবার

জাপানে বসন্ত মানেই সাকুরা ফুল। সাকুরা জাপানিদের আত্মা। জাপান শিশু, নারী এবং ফুলের দেশ। আর এই ফুল মানেই সাকুরা। এই ফুল নিয়ে জাপানিদের মাতামাতি কেন? আসুন সেই ইতিহাস জানার চেষ্টা করি।


প্রারম্ভ:
সামাজামা নো কতো অমোহিদাসু সাকুরা কা না’--মাৎসুও বাশোও।
অর্থাৎ, কত কিছু মনে আসে সাকুরা নাকি !
জাপানের বিখ্যাত হাইকু কবি বাশোও উপরোক্ত কথাই বলতে চেয়েছেন সাকুরা সম্পর্কে বসন্তের কোন একদিনে, আজ থেকে কয়েকশ’ বছর আগে। এই একটি হাইকুতেই জীবনের সঙ্গে সাকুরার যে কী নিবিড় সম্পর্ক তা বিধৃত হয়েছে। জাপানের জনজীবন থেকে তাই সাকুরাকে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব। সাকুরা যেমন বসন্তের প্রতীক, তেমনি জাপানিদের চিন্তাচেতনা ও সৌন্দর্যবোধের উৎস হিসেবেও একে গণ্য করা যায়।


মার্চ মাসের ২০ তারিখে জাপানে বসন্ত ঋতুর জন্ম। হানামি তথা সাকুরা উৎসব অথবা চেরী ফেস্টিভ্যালের সময়কাল হচ্ছে এ ঋতু। সাকুরা মূলত উষ্ণ জলবায়ুর ফুল। কানসাই অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে সর্বপ্রথম আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আর উষ্ণ হাওয়ার স্পর্শ লাগলেই সাকুরা আঁখি মেলা শুরু করে। তবে কিছুটা শীত শীত অনুভূত হয় এপ্রিলের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। ক্রমে কিউশুও, ওওসাকা, কাগোশিমা, ওকিনাওয়া প্রভৃতি অঞ্চল হয়ে সাকুরা টোকিওর দিকে ঘোমটা ফেলে ফেলে আসতে থাকে। তারপর এপ্রিল মাসের শেষ দিক থেকে শীত প্রধান ফুকুশিমা, হোক্কাইদোও, নিগাতা প্রভৃতি অঞ্চলের দিকে চলে যায়। মে মাসের শেষ ভাগ, স্থানান্তরে জুন মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ঐ অঞ্চলের কোথাও কোথাও সাকুরা থাকে।


সাকুরা ফুলের ইংরেজী নাম চেরী। অবশ্য চেরী ফ্রুট বলতে আমরা আমেরিকা, য়োরোপ বা জাপানেও এক প্রকার ফলকে বুঝি। জাপানিরা চেরী ফলকে বলে সাকুরাম্বো। সাকুরাবৃক্ষের সঙ্গে যার কোন সম্পর্ক নেই। বস্তুত সাকুরা গোলাপ প্রজাতির ফুল এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম ‘প্রুন’ (Prun)। জাপানের জাতীয় ফুলও বটে সাকুরা, তবে ইয়ামাজাকুরা। কিন্তু রাজকীয় পরিবারের প্রতীক হচ্ছে আবার ‘ক্রীসেন্থিমাম’। জাপানি ভাষায় যার নাম ‘কিকু’। কিন্তু প্রাচীন কাল থেকেই অভিজাত শ্রেণী এবং সাধারণ মানুষ সাকুরাকে ভালোবেসে এসেছে বিধায় সাকুরাই জাতীয় ফুল হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত। সাকুরা ক্ষণজন্মা ফুল। প্রস্ফুটিত হওয়ার ৩/৪ সপ্তাহের মধ্যে তাকে বিদায় নিতে হয়। কানতোউ তথা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সাকুরার সৌন্দর্য উপভোগ করা নির্ভর করে সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর। কেননা ফুটছে তো ঝরে যাচ্ছে সাকুরা। সাকুরা ফোটার কালেই লেগে থাকে ঠাণ্ডা ঝড়ো বাতাস, বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও বরফ। একে তো ক্ষণজন্মা ফুল, তার ওপর ভঙ্গুর। বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে টিকে থাকার মতো শক্তি তার নেই। বাংলা অঞ্চলের ক্ষণজন্মা শিউলি ফুলের সঙ্গে সাকুরার তুলনা হতে পারে।


সাকুরাকে সত্যিকারভাবে উপভোগ করার সময় হচ্ছে এপ্রিল মাসের ৩ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত। এই সময়ে সাকুরা বৃক্ষে আর কোন কলি থাকে না সম্পূর্ণভাবে প্রস্ফুটিতাহয়ে ওঠে বৃক্ষরাজি। তারই তলে অনুষ্ঠিত হয় হানামি। হানা অর্থ ফুল, আর মি (মিরু) মানে দর্শন দুটো শব্দ মিলিয়ে হানামি অর্থাৎ ফুলদর্শন। জাপানিরা এই রীতিকে বলেন, সাকুরা মাৎসুরি বা চেরী ফেস্টিভ্যাল। প্রশ্ন হচ্ছে, আনন্দ উৎসব করার মতো জনপ্রিয়তা এই ক্ষণজন্মা ফুলটি পেল কেন? কেন একে নিয়ে এ্যাতো মাতামাতি? কেন সাকুরা বলতে সকলে আত্মহারা? জাপানিদের মুখ থেকে এর উত্তর পাওয়া যায়, “সাকুরা উৎকুশিই। উৎকুশিই কারা!!” অর্থাৎ “সাকুরা অপরূপ। সাকুরা অতুলনীয় সুন্দরী বলে!” সাকুরাকে কেন ভালোবাসেন? জিজ্ঞেস করেছিলাম জনৈক তরুণ হাইজিন বা হাইকু লিখিয়েকে। শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলেন, “সাকুরা গন্ধহীন। কিন্তু বড্ড রূপবতী সে। তার এই পশমী নরোম রূপ, আঙুল দিয়ে ছুঁতে না ছুঁতেই ঝরে যায়। মলিন হয়ে লুটিয়ে পড়ে ঘাসে। সাকুরার এই অভিমানটুকু আমাকে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ করে তোলে। কেন তাকে ছুঁয়ে দেখতে চাই--এই লজ্জায় সে অভিমানী হয়ে ওঠে। কিন্ত তাকে আরো নিবিড় করে পেতে চাই। এই না পাওয়ার কারণেই সাকুরাকে ভালোবাসি।” ব্যাখ্যাটি অন্য জাতির লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু এতে করে সাকুরাপ্রেমিক জাপানিদের কিছু যায় আসে না।


সাকুরা ভাগ্যবতী। সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজও লেখা হচ্ছে তাকে নিয়ে হাইকু, ওয়াকা-তানকা কবিতা, গান কত কি! জাপানের জন, স্থান, প্রতিষ্ঠান, অর্থ, শিল্পকলা, সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, কেশচর্চা, ফ্যাশন, সৌন্দর্যচর্চা, খাবার-দাবার, রীতি, সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণা কোথায় নেই সে! সাকুরা জাপানিদের দেহমনের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এই সাকুরার রয়েছে নানা রকম জাতি-জ্ঞাতি-গোত্র এবং নানা তথ্য-কাহিনী যা কিনা এক বিশাল ব্যাপার। তার কিছুমাত্র বিষয় এই লেখায় তুলে ধরা হচ্ছে পাঠকের জ্ঞাতার্থে। বাংলা ভাষায় সম্ভবত এর আগে এমন করে সাকুরা-বন্দনা কেউ করেছেন বলে আমার জানা নেই। সাকুরার মতো আমরাও শিউলি উৎসব বা কৃষ্ণচূড়া উৎসব করতে পারি। কবিতা পাঠ, সঙ্গীতানুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে ফুলের সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করা যাবে তেমনি মনের ভাব বিনিময়ের একটি সম্মিলন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর কিছু হবে না বলে ধারণা। ‘শিউলি আড্ডা’ দিয়েই শুরু করা যাক না, আড্ডাকাতর বাঙালি নতুন এক সংস্কৃতির সূচনা করতে করতে পারে!


‘সাকুরা’র ধ্বনিগত উৎপত্তির উৎস: প্রথমেই আমাদের খানিকটা জানা প্রয়োজন ‘সাকুরা’ এই শব্দটির ধ্বনিগত অথবা ভাষাগত উৎসটি কি বা কোথা থেকে এলো?


সাকুরা প্রাচীনকাল থেকেই জাপানি সমাজে ফুলচর্চার মধ্যে প্রধান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। জাপানব্যাপী এর বিস্তৃতি যেমন লক্ষণীয়, তেমনি প্রাচীন গ্রামীণ জনজীবনের ওপর এর প্রভাব অচিন্তনীয়। কখনও সেটা মানুষের মননের সঙ্গে আধ্যাত্মিক, কখনওবা ঐশ্বরিক যোগসূত্রের প্রতীক হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। ফলে সাকুরা ফুলের এই ভূমিকা থেকে জন্ম নিয়েছে ‘সাকুরারোন’ বা ‘সাকুরাতত্ত্ব।’ (চলবে)