ঢাকা, রবিবার ০৮, সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৯:৩৮:০২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
নামছে বন্যার পানি, বাড়ছে নদীভাঙন কুমিল্লায় বন্যায় ১১০০ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি যে কারণে বাড়ছে চালের দাম গাজায় টিকা কর্মসূচির মধ্যেই ইসরায়েলি হামলা:নিহত ২৭ শুল্ক কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু বঙ্গবন্ধু সেতুতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষ, ৩ জনের প্রাণহানী

সিলেটে বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৬ এএম, ২১ জুন ২০২৪ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বন্যায় ভাসছে সিলেট। ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের সুনামগঞ্জে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। খাদ্যের অভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে বড় সংকটে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ।

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে খামারের মাছ ও হাঁস। আমন, আউশ, ইরি ধানি জমি পানির নিচে। নলকূপ নিমজ্জিত থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের অভাবে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন, মসজিদ, মন্দির ও কবরস্থান প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদেরকে। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বন্যায় পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলার ৬ লক্ষাধিক মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভোর পর্যন্ত জেলার প্রধান নদী সুরমা, কালনী, কুশিয়ারা ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, বুধবার বিকেল ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পানি স্থির ছিল।

হাওর এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, দিনে মাঝে মাঝে বৃষ্টি বন্ধ হলেও মুহূর্তেই কালো হয়ে উঠে আকাশ। নামে অবিরাম বর্ষণ এবং বর্ষণের সাথে শুরু হয় গর্জন। ভোগান্তি আর আতংক এখন সুনামগঞ্জবাসীর নিত্য সঙ্গী। একটানা ৪ দিন ধরে পাহাড়ি ঢলের সাথে লড়াই করে চলছেন বানভাসিরা। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেকেই বাসা বাড়ী ছেড়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

এদিকে, সুনামগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও জেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে বুধবার (১৯ জুন) দিনব্যাপী শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন সুনামগঞ্জ ৪ (সদর বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ছাতক উপজেলায় ১৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়, আসাম ও ছেরাপুঞ্জিসহ সীমান্তে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ইমন গণমাধ্যমকে বলেন, জেলার ১১টি উপজেলায় ৬ লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছেন। জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮ হাজার বন্যার্ত ভিকটিম আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত বরাদ্দ রয়েছে জিআর ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও জিআর ক্যাশ হিসেবে ৩৫ লাখ টাকা।

সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ খালেদুল ইসলাম বলেন, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ সাড়ে তিন লাখ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ মোবাইল ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট এর আওতায় প্রতিটি গাড়িতে ৬ হাজার লিটার করে ২ টি গাড়িতে ১২ হাজার বিশুদ্ধ পানি এবং ১৪ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রয়েছে। এ দিকে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে প্রায় ৩ হাজার নলকূপ নষ্ট হয়েছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলায় ১ হাজার ৬ শত ৭৭ হেক্টর আউশ ধান ও ৪ শত ১৩ হেক্টর সবজি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে ১২ উপজেলায় প্রচুর গোখাদ্য বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের জন্য ১০ মেট্রিকটন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দসহ বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। জেলা প্রশাসন বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।