ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, নভেম্বর ২০২৪ ৪:০২:৫৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আয়ারল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে ওয়ানডেতে বড় জয় টাইগ্রেসদের জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস ভারতীয় আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, বাড়ছে দাম ঢাকায় জিকা ভাইরাস শনাক্ত খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে যে তথ্য জানা গেল টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা

তিন মাসের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি

মোমিন মেহেদী | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:৩২ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার

মোমিন মেহেদী

মোমিন মেহেদী

রুপার বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। রুপার মা হাসনা হেনা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন আর বলছেন, ‘আমার মেয়ে বলেছিল, কোরবানির ঈদে আসবে। আর ওর আশা হল না। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব। ওর স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে বড় কিছু হবে।’ কয়েকদিন আগে রুপা মোবাইলে তার মাকে বলেছিলেন, ‘মা আর অল্পদিনের মধ্যে ফিরে আসব। সামনে কোরবানির ঈদ, তাইতো একবারে এলেই ভালো হয়। নিজের দিকে খেয়াল রাইখো। বড়ভাই আর উজ্জ্বলের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিও। তুমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিও। শরীরের প্রতি যত্ন নিও।’ মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে এটাই রুপার শেষ কথা। রুপার মা হাসনা হেনা আরও বলেন, ‘আমাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম মেয়েকে আল্লাহ নিয়ে গেলেন। এখন আমি কিভাবে বাঁচব। কেউ তো আমার সোনা মানিকের মতো আমার খবর নেবে না। রুপা তো আর আমাকে মা মা বলে ডাকবে না। আমার সোনার পাখিকে যারা হত্যা করেছে আমি তার কঠিন বিচার চাই।’ ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যায়নরত ছিল রুপা। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে শেরপুর জেলায় অবস্থিত ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রমোশনাল ডিভিশনে চাকরি নেয়। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করে সংসার চালানোই ছিল ওর ইচ্ছা। রোজার ঈদে পরিবারের সঙ্গে হাসি-খুশিতে ঈদ করেছিল। কিন্তু শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আর ফিরল না।

বগুড়ার চারমাথা থেকে বাসটি সন্ধ্যা ৭টার পরপর ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। বনানী এলাকা থেকে রুপাসহ আরও পাঁচ-ছয়জন যাত্রী বাসে উঠেন। সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সব যাত্রী নেমে যান। শুধু রুপা বাসে ছিলেন। বাস এলেঙ্গা পার হওয়ার পর সহকারী শামীম রুপাকে জোর করে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়। তখন রুপা মুঠোফোন এবং সঙ্গে থাকা পাঁচ হাজার টাকা শামীমকে দিয়ে অনুরোধ করেন তার কোনো ক্ষতি না করার জন্য। টাকা ও মুঠোফোন নেয়ার পরে শামীম তরুণীকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে। পরে বাসের অপর দুই সহকারী আকরাম এবং জাহাঙ্গীর পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। বাস মধুপুর উপজেলা সদরের কাছাকাছি পৌঁছলে রুপা চিৎকার করার চেষ্টা করেন। এ সময় শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তার ঘাড় মটকে হত্যা করে। পরে মধুপুর শহর পার হয়ে বনাঞ্চলের প্রবেশের পরেই পঁচিশ মাইল এলাকার সুমি নার্সারির কাছে রুপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়।

অথচ এই রুপা বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। এর আগে তাড়াশ জেআই টেকনিক্যাল কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে সাফল্যের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন। বাবা জেলহক প্রামাণিক এক বছর আগে মারা যান। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে রুপা চতুর্থ। বড় বোন জেসমিনের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৭ বছর আগে। আরেক বোন পপি অনার্স পাস করেছেন। ছোট ভাই উজ্জ্বল বেকার। বড়ভাই হাফিজুর রহমান আর রুপা মিলেই সংসার চালাতেন। এ অল্প বয়সেই পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে নিয়েছিল সংসারের ঘানি। রুপা বহুবার মাকে বলেছেন, ‘আর কয়েকটা বছর অপেক্ষা কর, আমাদের সংসারে আর কোনো অভাব থাকবে না।’

অভাবকে তাড়াতে গিয়ে আমাদের সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত রুপা সুন্দর ১টি জীবনের জন্য কষ্ট করেছে; তাকেই প্রাণ দিতে হলো নৃশংসতার শিকার হয়ে। তার মায়ের কথা ‘তাদের ফাঁসি না দিলে মাইনবো না।’ আমরাও মানবো না রুপার হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় না হলে, কার্যকর না হলে। কেননা, একজন রুপাই শুধু নয়; আমরা ইয়াসমিন থেকে শরু করে বুশরা, হেনা, নাজমা, সুমাইয়া সহ ১৭ হাজার ৮ শতরও বেশি মা- বোন-প্রিয়জনকে হারিয়েছি স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪৬ বছরে। তনুর কথা ভুলতে না ভুলতেই চলে এসেছে খাদিজার কথা, খাদিজার কথা ভুলতে না ভুলতেই চলে এসেছে চন্দ্রিমার কথা; এভাবে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১০৪ জন নারী এখন নির্যাতিত-ধর্ষিত হচ্ছে বলে চিল্ড্রেন এ্যান্ড উইমেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ঈ২ডঋ জানিয়েছে। এর মধ্যে হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন ৭ থেকে ১৫ পর্যন্ত। যার অধিকাংশের তথ্যই পুশিশ-প্রশাসন ও গণমাধ্যম পর্যন্ত পৌছেই না। পৌছতো না এই ঘটনাটিও। যে ঘটনাটি টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঘটেছিলো।

হয়তো অনেকেরই মনে আছে যে, এর আগেও টাংগাইলের ধনবাড়িতে চলন্ত বাসে ধর্ষণ হয়েছে। একই কায়দায় পেছনের সিটে নিয়ে। এবং তাকে ময়মনসিংহে একখানে ফেলে দেওয়া হয়। ১৬ মাসেও সেই মামলার অভিযোগ গঠন হয়নি । তিনজন আসামীর মধ্যে একজন জামিন পেয়েছে । অথচ তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়ে দোষ স্বীকার করেছিল। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে এদেশের রাস্তা-ঘাটে, হাটে -বাজারে, বাসে- ট্রাকে রেপ হবে না তো কি হবে ব্রুনাইয়ে? যে নারীর ধর্ষণ হয়েছিল তাঁর স্বামী নিজে অন্য বাসকর্মিদের সহায়তায় আসামী খুঁজে বের করেছিল। স্বীকার করে নেবার পরও এসব ধর্ষকের বিচার হচ্ছে না। রাস্ট্র যন্ত্র যদি তাদের বিচার করতে না পারে পাব্লিকের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক। আধুনিক প্রযুক্তিতে বিচার হবার পেছনে বছরের পর বছর লাগার কারণ কি? রুপাকে ধর্ষণ হত্যার পেছনে যে পাঁচজন জড়িত তারা স্বীকার করেছে । এরপর তাদের ফাঁসিতে লটকাতে স্বাক্ষী সাবুদ আইন ফাঁক এসব কেন? পাঁচ দিনেই ঝুলিয়ে দেওয়া হোক। ধর্ষকদের সেসব ঝুলন্ত লাশের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হোক দেশ ব্যাপী । এসব ছবি দেখে প্রতিটা ধর্ষণকামী পুরুষের পুরুষদন্ড যাতে আজীবনের জন্য নিস্তেজ হয়ে থাকে। প্রতিটা নারীকে এসব কামাশক্ত পুরুষ যাতে মা নজরে দেখে...

একই সাথে রুপার ছবি শেয়ার করতে চাই, শেয়ার করে বলতে চাই যে, আপনারা দেখুন এবং বিবেককে জাগ্রত করুন । চশমা পরা মিষ্টি মেয়েটি যে কিনা নিজের কাঁধে একটি সংসারের বোঝা তুলে নিয়েছিল তাঁর পরিনতি দ্বিতীয় ছবি হবার কথা ছিল? আর তৃতীয় ছবির জন্তুগুলোর ফাঁসি দিতে কোন সাক্ষীর প্রয়োজন আছে? ঘটনা কিন্তু এটাই প্রথম নয়; অতএব, কালকের জন্য নূন্যতম সতর্কতারসরুপ ফাঁসি চাই ৩ মাসের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি। এর আগেও অনেক লিখেছি আমি; রাজপথেও অনেকবার আন্দোলন সংগ্রাম করেছি ৩ মাসের মধ্যে ফাঁসি চেয়ে; আজো চাইছি। আশা করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনককন্যা শেখ হাসিনা বিষয়টি ভাববেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাবেন নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ দেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে...

একই সাথে তাদেরকে তৈরি হওয়ার আহবান জানাবো; বাংলাদেশকে ভালোবেসে হেসে হেসে যারা বায়ান্নর মত, একাত্তরের মত অবিরত তৈরি আছেন থাকবেন জীবন দিতে। তারা আরো একবার ঐক্যবদ্ধ হলেই বাংলা ভাষা যেমন আমাদের হয়েঝে; এই মানচিত্র যেমন আমাদের হয়েছে; ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মািিট আমাদের জন্য নিরাপদ হবে বলে দৃঢ়তর আশায় অগ্রসর হতে পারি।

বায়ান্ন মানে যেমন বাংলা ভাষা; একাত্তর মানে যেমন স্বাধীনতা; নব্বই মানে যেমন সাহস মিছিল; ২০০৮ মানে যেমন এক এগারোর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা; ঠিক তেমনি ২০১৭ মানে নিরাপদ দেশ গড়া। যে দেশে সাহসের সাথে সবাই দুর্নীতি-খুন-গুম-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী-অন্যায় আর অপরাধের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে। বাংলাদেশকে কালোহীন আলোকিত করতে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন। নতুন প্রজন্মকে সেই সাহসী সময়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবেন নাগরিকগণ। যারা রাজনীতির নামে মৃত্যুশহর চান না; যারা রাজনীতি মানে রাতের আঁধারে যুবতীর লাশ চান না; যারা রাজনীতি মানে নির্মমতার অন্ধকারে আগামীকে হারাতে চান না; তারা অন্তত জাগুন; জেগে উঠুন নিদেন পক্ষে একবারের জন্য; উচ্চারণ করুন- বিজয় বাংলাদেশ; বিজয় নতুনধারা; সময়ের সাথে সাথে হাত রেখে প্রতি হাতে গড়বে স্বদেশ যারা; ডাক দিয়েছে আজ চারিদিকে সাহসরাজ; যুদ্ধ নয় আলোর সাথে ভালোর সাথেই এগুবে তারা; বিজয় বাংলাদেশ বিজয় নতুনধারা...

লেখক : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি।