ঢাকা, বুধবার ০৮, জানুয়ারি ২০২৫ ২১:০৮:০৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া নতুন ছড়ানো এইচএমপি ভাইরাসে বাংলাদেশ কি ঝুঁকিতে? আজও ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকা শহরের বাতাস আজ বিকেলে লন্ডন পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া শীত আরও বাড়বে, সেই সঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস তিব্বতে ভয়াবহ ভূমিকম্প: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬ শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল দিল্লি তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্প, নিহত বেড়ে ৫৩

৪০ বছর ভারতে থেকে নাগরিকত্ব পেলেন বাংলাদেশি নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০৭ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

৪০ বছর আগে ভারতের বিহার রাজ্যের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে দেশটিতে থাকতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাসিন্দা সুমিত্রা রানি সাহা। তিনি দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় ভারতে থেকেছেন এবং গতবছর ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) সাহায্যে এদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের চার মাসের মাথায় তাকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।

সুমিত্রা রানির আবেদন পাওয়ার পর রাজ্যের সেন্সাস এবং নাগরিকত্ব রেজিস্ট্রেশন বিভাগের ডিরেক্টর এম রামচন্দ্রন তার নথিপত্র এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিধি যাচাই করে তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছেন। এই আইনের ৫(১)(সি) ধারায় তাকে ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে পরিবারের মানুষেরা স্বস্তি অনুভব করছেন। তারা জানিয়েছেন, গত ৪ দশকে একবারও ভোট দিতে পারেননি সুমিত্রা, এছাড়া কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি এবং বহু বছর আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছেন তিনি।
১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে বিহারের ভোজপুর জেলার আরা শহরের বাসিন্দা পরমেশ্বর প্রসাদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুমিত্রার। তখন তার বয়স ২১ বছর। সুমিত্রা জানিয়েছেন, তার মামার বাড়ি বিহারের কাটিহার জেলায়। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় মাত্র ৬ বছর বয়সে তাকে রাজশাহীতে পিসির বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তার মা। সেটা ছিল ১৯৭০ সাল। পিসির বাড়িতেই বড় হয়েছেন তিনি। একসময় মামা বাড়ির সূত্রে তার বিয়ের আলাপ আসে এবং বিয়ে করে আরা শহরে আসার পর আর বাংলাদেশ ফিরে যাননি তিনি।
সুমিত্রার কন্যা ঐশ্বর্য প্রসাদ জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছেন তার মা ভিসা নবায়নের জন্য তাকে নিয়ে কলকাতায় যেতেন, গত চার দশকে তিনি নিয়মিতভাবে কাজটি করেছেন। তবে গত বছর ভিসা কার্যালয়ে যাওয়ার পর কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়তে হয় সুমিত্রাকে। প্রথমে কর্মকর্তারা তাকে কিছু অতিরিক্ত প্রশ্ন করেন এবং শেষমেষ তাকে সিএএ-এর মাধ্যমে ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পরামর্শ দেন।
ঐশ্বর্য বলেন, ‘আগে মাকে এতটা অস্বস্তিতে পড়তে দেখিনি। আমরা বাড়ি ফিরে এক আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করি এবং নতুন আইনের বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে আবেদন করা হয়। রাজশাহীতে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সেই নথি-সহ ভারতে থাকার প্রয়োজনীয় নথি আমরা জমা দিয়েছিলাম। সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের সাহায্য করেছেন এবং মাত্র চার মাসের মাথায় আমার মা এবার ভারতীয় নাগরিক। ছোটবেলা অনেকেই আমাদের ভয় দেখাতেন, বলতেন আমার মা বাংলাদেশি এবং একদিন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাবে। এখন আর সেই ভয় নেই। এবার মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমার মা ভারতীয়।’
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ভারতবর্ষের বর্তমান শাসক দল বিজেপির অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদির সরকার আইনটি নিয়ে কাজ শুরু করে এবং পাঁচ বছর পর এটি পাশ হয়। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নির্যাতনের ফলে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ এবং পার্সি সম্প্রদায়ের লোকেরা ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এই আইন পাশ হলেও এটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিধি প্রকাশ হয় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে।
পাকিস্তান থেকে ভারতের আশ্রয় নেওয়া অনেকেই এই আইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছেন তবে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ভারতের নাগরিকত্ব পান আসামের শিলচরের বাসিন্দা দুলন দাস। কিছুদিন আগেই তার নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়েছে। এবার সুমিত্রা রানি সাহাও একইভাবে নাগরিকত্ব পেলেন।
সুমিত্রা রানির এই নাগরিকত্ব পাওয়া কি সার্বিকভাবে আসামে কোনো প্রভাব ফেলবে? কারণ সেখানে নাগরিক পঞ্জি হওয়ার পর ১৯ লাখ মানুষ তার বাইরে। বহু মানুষকে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল বিদেশি ঘোষণা করেছে। তারাও কি সুমিত্রা রানির মতো নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন? এবিষয়ে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের সাবেক বিচারক এবং আইনজীবী ধর্মানন্দ দেব ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘আইনটি বানানো এবং পাস করার ক্ষেত্রে সরকার যেভাবে প্রচার করেছে, এটি ব্যবহার করে নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ততটা প্রচার হচ্ছে না। আসামে যখন এনআরসি প্রক্রিয়া হয়েছিল, সরকার লাগাতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ব্যবহার করে নির্যাতিত হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা ভারতের নাগরিকত্ব পেতে পারেন, এনিয়ে প্রচার হচ্ছে না।’
সুমিত্রা রানির মতো অনেকেই আছেন যারা বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে বিয়ে করেছেন এবং এখানে বহু বছর থাকার পরও নাগরিকত্ব পাননি। আসামের এক নারীও এভাবে আবেদন করেছেন এবং তার নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ধর্মানন্দের হাত ধরে এখন পর্যন্ত ১২ জন বাংলাদেশি এই আইনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।
ধর্মানন্দের কথায়, ‘এই আইনে নাগরিকত্ব আবেদনের জন্য সাতটি বিকল্প রয়েছে এবং সব থেকে সহজ বিকল্পটি হচ্ছে বিবাহসূত্রে নাগরিকত্ব। তবে এক্ষেত্রে নারীর স্বামীর বার্থ সার্টিফিকেট (জন্মের শংসাপত্র) বা পাসপোর্ট দেখাতে হবে। আমার মতে ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে সুমিত্রার মতো অনেক নারী রয়েছেন কিন্তু তারা আবেদন প্রক্রিয়ার জটিলতার জন্য হয়তো এগিয়ে আসছেন না।’

তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে।