ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪১:২৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশায় ঝিকরগাছার চাষিরা

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশায় ঝিকরগাছার চাষিরা

৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশায় ঝিকরগাছার চাষিরা

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারার ফুলের বাগানে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। দিন রাত চলছে বাগানের পরিচর্যা। এখন ফুলের ভরা মৌসুম। এ মাসেই ধরতে হবে তিনটি উৎসব।

আগামী ১৩ ফেব্রুয়ার পহেলা বসন্ত, পরদিন ভালোবাসা দিবস। এ দুটি দিবসে প্রিয়জনের মন রাঙাতে মুখিয়ে আছে দেশের তরুণ-তরুণী, যুবকসহ সব বয়সী মানুষেরা। প্রিয়জনের ভালোবাসা প্রকাশে ফুলই শ্রেষ্ঠ। সেই সব মানুষের মনের খোরাক মেটাতে গদখালীতে চাষিরা এখন দিনরাত পরিশ্রম করছেন। বিশেষ করে বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবসে এসব ফুলের বিকল্প নেই। আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও রয়েছে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। তাই বছরের এ তিনটি দিবসকে ঘিরেই হয় মূল বেচাকেনা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার চাষিরা ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার ফুলের বিকিকিনি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।

জানা গেছে, এই এলাকার অনেক চাষি তাদের জমিতে ধান, পাটের চাষ চুকিয়ে সারা বছরই এখন ফুল চাষ করছেন। দেশে ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির তথ্য মতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০-৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৮-১০ হাজার ফুল চাষি ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্যালোরিয়াস। এখানে শতকরা ৪৫ শতাংশ চাষ হয় গ্যালোরিয়াসের। রজনীগন্ধার চাষ হয় ২৫ শতাংশ, গোলাপ ২০ শতাংশ আর এখানে উৎপাদিত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১২ ধরনের ফুল সারা দেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে এখানকার চাষিরা।

পাটুয়াপাড়ার বাসিন্দা ফুল চাষি নার্গিস বেগম বলেন, ‘আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় পাঁচ থেকে ছয় টাকার মতো। যদি ১০-১২ টাকা বিক্রি করা যায় তাহলে ভালো মুনাফা হবে।’

ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, ডাবল রজনীগন্ধা (ভুট্টা) ও হাইব্রিড রজনীগন্ধা (উজ্জ্বল), গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা এবং গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। গত দুই মাস ফুলের বাজার একটু খারাপ গেছে। আবার এসএসসি পরীক্ষার কারণে দাম কিছুটা কম। কিন্তু বসন্ত উৎসব, ভ্যালেনটাইনস ডে এবং মহান শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি।'

তিনি আরও বলেন, এক বিঘা গোলাপ রোপনে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়। ৪ হাজার চারার দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আর রোপনসহ অন্যান্য খরচ আরও ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিচর্যার খরচ রয়েছে বাড়তি। একবার রোপনে ৬-৭ বছর পর্যন্ত গোলাপ ফুল পাওয়া যায়।

ফুল চাষি আমজাত হোসেন বলেন, ‘তিনটি দিবসকে সামনে রেখে ফুলের বাগান পরিচর্যা করছি। এবার বিঘাপ্রতি গোলাপ দেড় লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’

জারবেরা ফুল ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া বলেন, ‘এখন প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ হাজার পিস ফুল বিক্রি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দুই উৎসব ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে আমরা সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘সারাদেশের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ৩০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ১০-১২ হাজার ফুল চাষি রয়েছেন। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি দিবসকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন। এবার এই তিনটি দিবসকে সামনে রেখে এখানকার চাষিরা প্রায় ৭০-৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, এই অঞ্চলের ফুল চাষিদের জন্য সরকার ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ফুল চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘ফুল চাষিদের ব্যাংক ঋণ সহজ করতে ও ফুল সহজে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার,’ বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। দেশে ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। (সূত্র : ইউএনবি)